মেহেদি হাসান

ঢাকার পল্টনে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার তাণ্ডবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী নিহত ও আহতদের স্মরণে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সমাবেশ করেছে জামায়াত। মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর ও সদর উপজেলা জামায়াত এই সমাবেশের আয়োজন করে। 

বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর পার্কে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল। 

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিলেন, সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছিলেন। শুধু তাই নয়, মিডিয়ার গলা টিপে ধরেছিলেন, যাতে তার বা তার সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে না পারে। 

বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিশ্চিহ্ন করে আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য শেখ হাসিনা জামায়াত শিবিরের ৫ শতাধিক নেতাকর্মীতে হত্যা করেছেন, ২০ হাজার নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘরছাড়া করেছেন, অনেককে জেলা পাঠিয়েছেন। ২০১১ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে ঢাকায় আলেম-ওলামাদের নির্বিচারে হত্যা করেছেন। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে, দাঁড়িপাল্লা কেড়ে নেয়া হয়েছে, সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীকে দল হিসেবে নিষিদ্ধ করে। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে মাত্র ৪ দিনের মাথায় ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। 

নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের একটি  স্লোগান ছিল উই ওয়ান্ট টু জাস্টিস। আমরা চাই ন্যায়বিচার, দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন একটি সমাজ। সেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে দুর্নীতিমুক্ত মানুষ চাই। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রেক্ষাপট নিয়ে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, প্রশাসনের কাছে দাবি জানাতে চাই, আপনারা অবিলম্বে সুন্দরপুর ও রানীহাটি ও নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নে ভিলেজ পলিটিকসের নামে চাঁদাবাজি সন্ত্রাস বোমাবাজি চলছে, সেটি বন্ধ করুন। তিনি আরো বলেন, আমরা একটি বসবাসযোগ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ গড়ে তুলতে চাই। এইজন্য বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে ইসলামের আদর্শিক সৌন্দর্যকে পোঁছে দিতে হবে। যুব এবং ছাত্রসমাজকে ইসলামের সুমহান আদর্শের দিকে আহবান জানাতে হবে। 

বুলবুল বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যে চেতনা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ গড়ে তোলার জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদেরকে ভূমিকা পালন করতে হবে। তাহলে আগামী দিনে নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে পারব। আমরা দেখছি ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো সরকার যন্ত্রের বিভিন্ন রন্ধ্রে রন্ধ্রে ওঁৎপেতে আছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিগত সাড়ে ১৬ বছরে যারা ক্ষতিগ্রস্ত বৈষম্যের শিকার বিপর্যস্ত তাদেরকে স্বপদে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 

সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং সূচনা বক্তব্য দেন পৌর জামায়াতের আমির হাফেজ গোলাম রাব্বানী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবুজার গিফারী, নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি লতিফুর রহমান। 

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু বকর, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মূখলেসুর রহমান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা ওমর ফারুক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির সভাপতি ওমর ফারুক, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ  ফেডারেশনের জেলা সভাপতি অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট শফিক এনায়েতউল্লাহ, পৌর সেক্রেটারি মোক্তার হোসেন, সদর উপজেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কবীর, পৌরসভা শাখা সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হাই, সদর উপজেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক দুরুল হুদা, পৌর শাখার সহকারী সেক্রেটারি তোহরুল ইসলাম সোহেল, সদর উপজেলা সহকারী সেক্রেটারি আব্দুর রহমান।