আজ মঙ্গলবার, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাজশাহী বিভাগীয় আম মেলা ও উদ্যোক্তা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

মেহেদি হাসান

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, আজ থেকে ১৪ বছর আগে দেশে ৫৬ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন আর এখন ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আমি জানতে পারলাম, ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সার হয়ে এই চাঁপাইনবাবগঞ্জে কেউ কেউ মাসে ৫০ হাজার টাকা কেউবা দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঘরে বসে আয় করছেন। এটাই তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণ। আইসিটি বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল কিংবা এ২আই মিলে ৫ লাখ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। কিন্তু সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার তারা তো ১ বিলিয়নের  উপর আয় করছে। তাদেরকে এই সুযোগটা কে করে দিয়েছে, আওয়ামী লীগ করে দিয়েছে।  

গতকাল শনিবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে টাউন ক্লাবে রাজশাহী বিভাগীয় উদ্যোক্তা সম্মেলন ও আম মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।  

প্রতিমন্ত্রী বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে চার এমপি মহোদয়ের কাছে তালিকা চেয়েছি, যেসব নারী উদ্যোক্তা ডিজিটাল মার্কেট প্লেসে ব্যবসা করছেন তাদের মধ্যে থেকে আগামী এক মাসের মধ্যে ২০ জনকে ৫০ হাজার টাকা করে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে প্রদান করা হবে। তারা যদি ঠিকমতো সেইটা কাজে লাগিয়ে সফল হয় তাহলে আগামী ৬ মাসের মধ্যে আরো ১০০ জনকে ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।

দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেনÑ আমরা আগামী মাস থেকে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি, সেখানে এই চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৮০ জন নারীকে আমরা প্রথম তিন মাস প্রশিক্ষণ, তারপরে তিন মাস ইন্টার্নশিপ এবং শেষে নগদ ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়ে তাদের ব্যবসাটা আমরা শুরু করিয়ে দিব। এরকম ২৫ হাজার নারী উদ্যোক্তাকে আমরা সারাদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। যাদের মধ্যে ১০ হাজার ৪০০ জন হবে আইটি ফ্রিল্যান্সার, ১০ হাজার ৪০০ জন হবে ই-কমার্স প্রফেশনাল এবং বাকিগুলো হবেন কলসেন্টার এজেন্ট ও মেইন্টেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার। 

এসময় তিনি আরো জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলাসহ ৪ উপজেলা পরিষদ ৫ হাজার স্কয়ার ফুটের একটি করে ‘জয় স্মার্ট সার্ভিস ইমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার’ স্থাপন করা হবে। যার প্রতিটিতে ব্যয় হবে ২ কোটি টাকা করে। 

জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেনÑ মো. আব্দুল ওদুদ এমপি, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ এমপি, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম জেসী, জেলা পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ রুহুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ, নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল বাহার জাহিদ। উদ্যোক্তাদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের বন্যা পারভেজ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাফিজুর রহমান তাদের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। সূচনা বক্তব্য দেনÑ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সমন্বয়ক মেসবাহ উদ্দিন।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ৫২ বছর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। সে কারণেই বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে এক ঐতিহাসিক ভাষণে মাত্র চারটি লাইনে আমাদের ভবিষ্যৎ জনগোষ্ঠীকে কেমনভাবে গড়ে তুলতে হবে তার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমাদের এই স্বাধীনতা কখনই পূর্ণ হবে না যদি আমার কৃষক শ্রমিক পেটভরে খেতে না পায়, যদি আমার মা-বোনেরা পরনের কাপড় না পায়, যদি আমার তরুণ যুবকরা কাজ না পায়। বঙ্গবন্ধু আমাদের তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাটা স্বাধীন বাংলাদেশে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তরুণ প্রজন্মকে সবসময় উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন, তারা যেন চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্ত হয়, এজন্য তিনি সাহস জোগাচ্ছেন। একজন ছাত্র বা ছাত্রী ১৬ বছর ধরে লেখাপড়া করে বিসিএস দিয়ে চাকরি পেলে তার বেতন ২২ হাজার টাকা। আর একজন উদ্যোক্তার মাসিক আয় তার চেয়ে বহুগুণ বেশি। এই চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ডিজিটাল মার্কেটে বিক্রি করছেন, বিদেশে রপ্তানি করছেন, আম থেকে অন্যান্য খাদ্যপণ্য তৈরি করছেন। 

আম মেলা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক নারী উদ্যোক্তার হাতে তৈরি টুপি কেনার কথা বলতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই টুপি সৌদি আরবসহ দেশে ও বিশ^বাজারে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী আমাদের তরুণ প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেন তা বাস্তবায়ন করেন, একথা সবাই জানে। তিনি তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা তুলে ধরেন। 

পলক বলেনÑ আপনাদের মনে আছে, ২০০৪ সালে যাদের বয়স ছিল ২ বছর তারা হয়তো জানে না, বিএনপির আমলে বিদ্যুৎ চায়তে গিয়ে কানসাটে ১৯ জন মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। অপরদিকে জননেত্রী শেখ হাসিনা এই চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যুৎ কারখানা চালু করেছেন। ২০০৮ সালে নির্বাচনে সময় তিনি বলেছিলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিবেন, প্রতিটি মানুষকে উচ্চগতির ইন্টারনেট দিবেন, বিভাগ ও জেলাপর্যায়ে হাইটেক পার্ক, আইটি ট্রেনিং সেন্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করবেন, প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশ ঘটাবেন। গত ১৪ বছরে তিনি সবগুলো ওয়াদা পূরণ করেছেন। 

পরে প্রতিমন্ত্রী চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার রাজারামপুরে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শন এবং সদর উপজেলা পরিষদে জয় সেট সেন্টারের ফলক উন্মেচন করেন। এসময় সংসদ সদস্যগণসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। ‘নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন’ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। 


মন্তব্য সমুহ
০ টি মন্তব্য
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন
এই শ্রেনির আরো সংবাদ

ফিচার নিউজ