আজ সোমবার, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ই মে ২০২৪

আমি আমার ব্রতকে অন্তরে লালন করে আলোকিত করতে চাই - শেফালী খাতুন

মেহেদি হাসান

১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর তারিখ বিশ্ব ব্যাপি পালিত হয় বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা উন্নয়ন এক একটি দেশের সোনালী স্বপ্ন তৈরি করার জন্য শিক্ষকদের অসামান্য অবদান স্বরুপ পালন করা হয়। বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশ আজ এ দিবসটি পালন করছে এবং এ দিবসটি পালনের জন্য ৪০১ টি সংস্থার সদস্য মূল ভুমিকা পালন করছে। একজন শিক্ষক হয়ত জানে না যে আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস বা কোন 'গা' নেই তাই আমরা এ কোভিড ১৯ কারনে স্বপ্ল পরিসরে কিছু শিক্ষক এ দিবসটি পালন করে আমাদের এ মহৎ পেশাকে আরও উজ্জীবিত করব।

 

প্রাচীন গ্রীসের সক্রেটিসের সময় থেকে আজকের একবিংশ শতাব্দীতে এসে অনেক পেশা হারিয়ে গেছে অনেক পেশার উখ্খান ঘটেছে কিন্তু শিক্ষকতা টিকে আছে আজও একমাত্র তার সম্মানের জন্য। তাই শিক্ষক হতে গেলে আগে নিজেকে জানতে হবে শিখতে হবে। আপনি বা আমি যেই স্তরের শিক্ষক হই না কেন ভাবতে হয় ও ভাবাতে হয়। শিক্ষকের শিক্ষার পরিসর অনেক ব্যাপক আর এই বৃহৎ পরিসরকে আয়ত্বে আনার জন্য চাই দক্ষতা, সচেতনতা ও নিরন্তর প্রচেষ্টা। যাঁরা শুধু চাকুরির জন্য শিক্ষকতা করছেন তাঁরা যেন ইন্দ্রিয় গুলোকে অকার্যকর করে রেখেছেন।

 

শিক্ষকতার মত সৃজনশীল পেশা খুব কমই আছে এ পৃথিবীতে। পেশাগত জীবনে প্রতি পরতে পরতে যত ভালোবাসা , স্নেহ , মায়া- মমতা ঢেলে দেওয়া যাবে ততই এর নির্যাস বৃদ্ধি পাবে এবং হাজার হাজার গুন বৃদ্ধি পেয়ে ফিরে আসবে আমাদের মাঝে এর সুগন্ধি সারাজীবন জুড়ে এমন কি মৃত্যুর পরও রয়ে যাবে।

 

আমরা জানি একজন মানুষের সফলতার পিছনে শিক্ষকের ভুমিকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ । একজন শিক্ষক কেবল মাত্র পড়াশোনার ক্ষেত্রে নয় তিনি দেশ সমাজ ও ছাত্র - ছাত্রীকে জীবন চলার পরামর্শ দেন, ব্যর্থতায় পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেন সাফল্যের দিনে নতুন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন স্থীর করে দেন। তিনি তাকে শুধু মাত্র সফল হওয়া নয় কিভাবে ব্যর্থতাকে মোকাবিলা করে নিতে হয় এবং একজন ভালো মানুষ হওয়া যায় সেটা্ও শেখান। আমরা যখন শ্রেণি কক্ষে আমাদের সমস্ত গৌরবের কথা তুলে ধরি এবং বলি তোমারা কে কে শিক্ষক হতে চাও এতে কোন একটিও ছাত্র - ছাত্রী হাত উঠে না, আবার যদি বলি তোমরা কে কে ডাক্তার ও ইন্জিনিয়ার হতে চাও তখন শ্রেণি কক্ষে সোরগোল পড়ে যায় পারলে একহাত না দুইহাত তুলে। এ মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

তাই - তো শিক্ষক সম্পর্কে এ পি জে আব্দুল কালাম বলেছিলেন , যদি একটি দেশকে দূর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয় তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ ক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য পার্থক্য এনে দিতে পারেন তাঁরা হলেন মা, বাবা ও শিক্ষক। অ্যারিস্টটল বলেন যাঁরা শিশুদের শিক্ষা দানে ব্রত তাঁরা অভিভাবকদের থেকেও অধিক সম্মানীয়। পিতা মাতা আমাদের জীবন দান করেন ঠিকই আর সেই জীবনকে সুন্দর ও সোনালী ভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন শিক্ষক।

 

একজন শিক্ষক চলার পথকে গতিময় করে আর একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন উপকরণ থাকে যেমন খেলার মাঠ, গাছপালা , গবেষণাগার, পাঠাগার, কক্ষ, লেখার বোড, চক- ডাস্টার আর ও নতুন করে এখন মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তবে যাই থাকুক না কেন, সবচেয়ে বড় উপকরণে ও সবচেয়ে সৌন্দর্য শিক্ষক । তাই শিক্ষক বড় হলে সমস্ত জাতি যুগ-যুগান্তরে বড় হয়ে যায়। পৃথিবীতে বড় মাপের মানুষ মানেই শিক্ষক। এরা শুধু ছাত্র - ছাত্রী না সমাজের মধ্যে ও একটা অদ্ভুত সম্পর্কে গড়ে তুলে যা আর পাঁচটা পেশার মধ্যে নেই। শিক্ষককে তাঁর স্থান থেকে কখনো পদচ্যুত করা যায় না এটা কোন চাকুরী না এটা ব্রত। আর ব্রতকে কোন দিন বিদায় করা যায় না। আমরা শিক্ষক আমাদের হৃদয় ও মন কোমল আর ত্বক খুবই পাতলা আমরা যে কোন বিপদে মোকাবিলা করার সাহস রাখতে পারি। আমরা বিপদে প্রকৃতির দিকে চেয়ে থাকি প্রকৃতি আমাদের বলে দেয় কোনটা সঠিক আর কোনটা সঠিক নয়। বিপদকে আমরা কাঁদায় বা ধুলোয় পরিনত করতে পারি। কারন শিক্ষকের সামনে সবাই যেন মাথাটা নিচু করে থাকে যা অন্য পাঁচজনের সামনে করে না। আমাদের সবার সাথে যেন এক প্রীতিকর সম্পর্ক যাপিত হোক।

 

আমরা শিক্ষক আমাদের নেই কোন অহংকার নেই কোন ডাটপট, নেই কোন উঁচু নিচু, নেই উৎকোচ আমাদের কোন কিছুই নেই আছে এক বিশাল ভালোবাসা , আদর, মায়া মমতা ও স্নেহে ভরপুর আমাদের জীবন। জীবনে বড় অফিসার হওয়া যায় তবে জীবন উপভোগ করা যায় না তবে একজন শিক্ষক যদি সেই রকম শিক্ষক হয় তবে জীবনকে অবশ্যই উপভোগ করে থাকেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন 'মরিতে চাহিনা আমি এ সুন্দর ভুবনে মানবের মাঝে আমি বাঁচিবার চাই'। অন্যের হৃদয়ে বেঁচে থাকা হলো বেঁচে থাকা, তাই শিক্ষকেরা বাঁচে অন্যের হৃদয়ে। আমরা ছাত্র - ছাত্রীকে বই পড়ার প্রতি উৎসাহ দিব কারণ বই পড়লে তার জ্ঞানের পরিধি বাড়বে এবং মাছির মত একসাথে চারিদিক দেখতে পাবে ও ফুলের পাপড়ির মতো সুগন্ধি ছড়াবে। আমরা এখন একটা অস্থির সময়ের মধ্যে ডুবে আছি। কখন কাকে কিভাবে অ্যাটাক করবে আমরা কেউ জানি না। একমাত্র উপায় সর্তক থাকা। একটা অনুজীব গোটা বিশ্বকে থামিয়ে দিয়েছে। এখানে আমাদের অনেক শিক্ষা আছে। ছাত্র - ছাত্রীদের এমন ভাবে গড়ে তুলতে হবে তারা যেন যে কোন প্রতিকূল পরিবেশ কাটিয়ে উঠতে পারে। যেন ঠিক সময়ে থামতে পারে আবার এগিয়ে যেতেও পারে। তবেই তো বৃক্ষের মতো ফুল- পাতায় শোভিত হয়ে উঠবে, দেশ ও জাতির কাজে লাগবে। আমরা কখনো নিজেদেরকে শিক্ষার্থী তৈরির কারখানা মনে করব না বরং দেশকে সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক উপহার দেওয়ার আমাদের উদ্দেশ্য। সারাজীবন শিক্ষক অল্পতেই তুষ্ট তাঁর প্রধান লক্ষই থাকে শিক্ষার্থী ও জনগণের জ্ঞান বৃদ্ধি ও দেশের উন্নতি।



লেখক , সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞান)

বালিয়াডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়

 

 

মন্তব্য সমুহ
০ টি মন্তব্য
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন
এই শ্রেনির আরো সংবাদ

ফিচার নিউজ