আজ শুক্রবার, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২শে নভেম্বর ২০২৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা ক্যাম্পাসেই শখের বাগান ইউএনও দম্পতির

মেহেদি হাসান

ইট-কাঠের নাগরিক সভ্যতায় শহর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। কিন্তু মানুষ তার শিকড়কে সহজে ভুলতে পারে না। তাই সৌখিন মানুষ মাত্রই তাদের ঘরবাড়িতে সবুজ ধরে রাখতে নিজ নিজ বাড়ির ছাদে বা উঠানে তৈরি করছেন বাগান। এমনই একজন প্রকৃতিপ্রেমিক বাগানপ্রিয় মানুষ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আলমগীর হোসেন।
উপজেলা প্রশাসন চত্বরের ফাঁকা জায়গায় বিভিন্ন ফুলের বাগান তৈরি করে একদিকে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছেন, অন্যদিকে বসবাসের কোয়ার্টার এলাকাতেও নির্ভেজাল সবজি বাগান গড়ে তুলেছেন তিনি। বলা যায়, পুরো ক্যাম্পাস এখন সবুজ অরণ্য, প্রকৃতির বনাঞ্চল। একদিকে ফুলের সুবাস, অন্যদিকে কেমিকেলবিহীন টাটকা ও সতেজ সবজির সমারোহ। আর এর কারিগরই হচ্ছেন ইউএনও আলমগীর হোসেন দম্পতি। সহধর্মিণী নার্গিস আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে অবসর সময়টুকু কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন সবজি বাগান।
কি নেই সবজি বাগানে? টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, আলু, লাউ, স্কোয়াস, বেগুন, ঢ়েঁড়শ, ব্রুকলি, বিভিন্ন ধরনের শাক, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজসহ প্রায় সব ধরনের সবজি রয়েছে বাগানে। রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছও। তাদের দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন প্রতিবেশী দেলোয়ারা পারভীন রীমা। তিনিও তার ছাদে বাগান গড়ে তুলেছেন।
সরকারের গুরত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও অবসর সময়ে এই সবজি বাগান গড়ে তুলেছেন তারা। সকাল কিংবা বিকাল- বাগানের জন্য কাজের ফাঁকে ঠিকই সময় বের করে নেন প্রতিদিন। যতœ নেন নিজেদের হাতে। বাইরে কোথাও গেলে ভালো কোনো গাছ পেলে সঙ্গে নিয়ে আসেন বাগানে লাগানোর জন্য। ক্যাম্পাসের পুকুরটি সংস্কার করে শুরু হয়েছে মাছ চাষ। পুকুরপাড়ইবা বাদ যাবে কেন! সেখানেও মাচা করে লাউ, সিম চাষ করা শুরু করেছেন বাগানপ্রেমিক আলমগীর হোসেন। তবে বাগানের জন্য বেশি সময় দেন নার্গিস আক্তারই।
জানা যায়, ছাত্রজীবন থেকেই কৃষির প্রতি ভালোবাসার টান এ বাগান করতে তাকে সাহস জুগিয়েছে। মনকে প্রফুল্ল রাখতে থাকতে চান মাটির সান্নিধ্যে। আর তাই সস্ত্রীক নিজ হাতে বাগান গড়ে তুলেছেন।
ইউএনও দম্পতির বাগান করতে দেখে ছাদে বাগান তৈরিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন, এমনই একজন দেলোয়ারা পারভীন রীমা। তার ছাদে এখন বিভিন্ন রকমের ফুল, ফল, সবজি এমনকি মসলা-জাতীয় গাছের সমারোহ। তিনি বলেন, আমাকে গাছ লাগাতে উৎসাহ দেন আমাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহধর্মিণী নার্গিস ভাবী। প্রথম প্রথম তাদের চাষ করা সবজি এনে আমাদের খেতে দিতেন। হঠাৎ তিনি একদিন বলেন এত বড় ছাদে ফুল বা সবজি বাগান করছেন না কেন। সেই থেকে শুরু গাছ লাগানো। “ছাদে ফুল ছাড়াও সবজি এবং মসলার গাছ রয়েছে। এগুলোকে যতœ করেই সময়টা ভালোই কাটে”, বলেন তিনি।
বাগান বিষয়ে কথা হয় ইউএনও’র সহধর্মিণী নার্গিস আক্তারের সঙ্গে। সংসারের কাজ সামলিয়ে সবজি বাগান দেখাশোনা করছেন। পাশাপাশি অন্যকেও বীজ-চারা দিয়ে বাগান করতে উদ্বুদ্ধ করছেন। তিনি বলেন, এখানে বিভিন্ন সবজির গাছ লাগানো হয়েছে। টাঙ্গাইল থেকে বীজ নিয়ে এসে সবজি চাষ করা হচ্ছে। নিজেদের তৈরি জৈব সার দিয়ে বাগান পরিচর্যা করা হয়। তিনি আরো বলেন, শীতকালে সবজি খুব কমই কিনে খাওয়া হয়েছে। শুধু আমরাই নয়, এখানে কোয়ার্টারে যারা থাকেন তাদেরকেও এ বাগান থেকে সবজি দেয়া হয়।

নার্গিস আক্তার বলেন, যাদের বাড়িতে উঠান বা ছাদ আছে তারাও যেন শাকসবজি চাষ করেন, সেটাই আমরা চাই। শখের বশে হলেও এ ধরনের বাগান করা হলে বিষমুক্ত খাবার আমরা গ্রহণ করতে পারব।
ছোটবেলা থেকে গাছের প্রতি নেশা নার্গিস আক্তারের। সেই নেসা থেকেই এই দম্পতি তৈরি করেছেন বাগান। সংসারের পাশাপাশি যতটুকু সময় পান গাছগুলোকেই সময় দেয়ার চেষ্টা করেন। বলেন, “এরাই এখন আমার সন্তানের মতো হয়ে গেছে। দিনে একবার হলেও আমি এই গাছগুলোকে দেখতে আসি।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা টেবিল-চেয়ারমুখী হয়ে গেছি। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের কাজ করতে হবে। প্রত্যেকের মনের মধ্যে সুপ্ত বাসনা থাকে, সেগুলো পূরণ করার জন্য কেউ কেউ উদ্যোগী হন। তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনেক ফাঁকা জায়গা আছে, যেখানে নিজ উদ্যোগে নিজের পরিবারের জন্য হলেও সবজি চাষ করতে পারেন। এতে তার আত্মার খোরাক মিটিয়ে সোনার বাংলা গড়ার যে প্রত্যয় তা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব। তিনি সকলকে সৃষ্টিশীল ও নান্দনিকতার চর্চার আহ্বান জানান।

মন্তব্য সমুহ
০ টি মন্তব্য
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন
এই শ্রেনির আরো সংবাদ

ফিচার নিউজ