আজ মঙ্গলবার, ৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১শে মে ২০২৪

সুন্দরপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

মেহেদি হাসান

নিজস্ব প্রতিবেদক : চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি)  চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের নামে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগে জানা গেছে, সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচী ১০টাকা কেজি চাল বিতরণে স্বজনপ্রীতি, একই নামে ১৭ জনের ভিজিডি ও ১০টাকা কেজি চাল বিতরণ, ১৫টি পরিবারে স্বামী স্ত্রীর নামে ১০টাকা কেজির চাল, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, ভিজিডি কর্মসূচীতে টাকার বিনিময়ে কার্ড, ৪০ দিনের কর্মসূচীতে কাজ না করে টাকা উত্তোলনসহ নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন। 

১০ টাকা কেজির চালের তালিকায় দেখা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যানের আত্মীয় স্বজন,নিজস্ব লোক,তাঁদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের নামেই কার্ড বরাদ্দ হয়েছে অর্ধ শতাধিক। তালিকায় নাম রয়েছে বেশ কয়েকজন মৃত ব্যক্তিরও। তালিকায় নাম রয়েছে অথচ জানেন না এমন ব্যক্তিও আছেন। প্রাপ্ত চালের আংশিক পান, রয়েছে এমনও।

সুন্দরপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মরাপাগলা গ্রামের রেহেনা খাতুন জানান, তার নামে অনেক আগে ভিজিডির কার্ড হয়েছে অথচ সে জানেনা যে তার নামে সরকারের কোন উপকারভোগী কার্ড হয়েছে । এতে দেখা গেছে প্রায় ১০ অধিকবার তাঁর নামের কার্ডে চাল তুলা হয়েছে।

একই ওয়ার্ডের  মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, ১০ টাকা কেজির তালিকায় তাঁর নাম ছিল। ২০২০ সালের সংশোধিত তালিকাতেও তাঁর নাম আছে কিন্তু তিনি কোন চাল পাননি। ২০১৭ সালের কার্ড নং ১৪৫৪ এবং ২০২০ সালের সংশোধিত কার্ডে ৮নং ওয়ার্ডের স্থলে তার নাম ১নং ওয়ার্ডে করা হয়েছে যার কার্য নং ১১৮।

ছাবানিয়া গ্রামের এনামুল হক (৬৫) অভিযোগ করেন, গত রমজান মাসে তাঁর নামের বয়স্কভাতার ১২ হাজার টাকা তোলা হয়। তিনি শুধু টিপ দিয়েছে ব্যাংকে গিয়ে। টাকা তোলে চেয়ারম্যানের সহকারী মাইনুল ইসলাম। ওইদিন একইভাবে প্রায় ৩০ জনের বয়স্কভাতার  টাকা তোলা হয়। সবাইকে চেয়ারম্যানের বাড়িতে ডেকে পাঁচ হাজার করে টাকা কেটে সাত হাজার করে দেওয়া হয়। পাঁচ হাজার টাকা কার্ড করে দেওয়ার জন্য উৎকোচ হিসেবে নেওয়ার কথা ছিল আগেই। কিন্তু বয়স্করা গরিব। তাই আগাম টাকা দিতে পারেনি।

একইভাবে ফাটাপাড়া ফজলুর রহমানের মেয়ে হালেমা বেগমের বয়স্কভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি প্রতিবেদকের কাছে সরাসরি অভিযোগ করেন তিনি। 

এলাকার আরো কয়েকজন নাম প্রকাশ না শর্তে  অভিযোগ করেন, শুধু বয়স্কভাতাই নয়, প্রতিবন্ধীভাতা, দুস্থমাতা ও মাতৃত্ব¡কালীনভাতার কার্ড করে নেওয়ার জন্যও টাকা নেওয়া হয়েছে। আর এসব দুর্নীতি করা হয় তাঁর ( চেয়ারম্যান) ব্যক্তিগত সহকারী মাইনুল ইসলামের মাধ্যমে। এছাড়া ১০ টাকা কেজির চালের তালিকায় চেয়ারম্যান ও তাঁর  ঘনিষ্টজনদের স্বচ্ছল আত্মীয়স্বজনের নাম রয়েছে বহু। যারা শুনলে হাসবে যে পারিবারিক খ্যাতি যথেষ্ট সম্পদ থাকার স্বত্বেও তার নাম ব্যবহার করা হয়েছে।   একই পরিবারে একাধিক সদস্যের নাম ছিল ২০১৭ সালের তালিকায়। ২০২০ সালের সংশোধিত তালিকাতেও  রয়েছে এমন।  পরের তালিকাতে স্বামী-স্ত্রী  অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একটি পরিবারে একজন করে ভাতা ভোগ করার নিয়ম রয়েছে।  

কালিনগর ম-লপাড়ার সুরাইয়া বেগম, কালিনগর বিশ্বাসপাড়ার ইয়াসমিন বেগম, রামকৃষ্ণপুরের নাসিমা, বিশ্বাসপাড়ার তানজিলা, পাঁচ রশিয়ার নিলুফা, মোল্লান গ্রামের জায়েদা, নবাবজায়গীরের উম্মে জোহরা, জয়ন্দীপুরের রেখা, 

স্ত্রীর নামে ভিজিডি ও স্বামীর নামে ১০টাকা কেজির চাল এরকমও রয়েছে অনেকের এদের মধ্যে ২নং ওয়ার্ডের কালিনগর আমেনা ও সেরাজুল ইসলাম, ৮নং ওযার্ডের ফাটাপাড়ার টগরী ও হাসেন আলী, ৬নং ওয়ার্ডের চন্দ্রনারায়নপুরের জুলেখা ও দুলাল হক,  ৫নং ওয়ার্ডের কিচনিদহ গ্রামের সারমিন ও তরিকুল ইসলাম।  এমন স্বামী-স্ত্রীর নাম রয়েছে আরো অনেক। তালিকা ধরে তদন্ত করলেই এসব অভিযোগের সত্যতা বেরিয়ে আসবে। 

এছাড়াও ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা  মেম্বার  সায়েরা খাতুন স্বজনপ্রীতি করে ১০ টাকা কেজির চাল, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, ভিজিডি কর্মসূচীতে টাকার বিনিময়ে কার্ড করে দিয়েছে বলেও এলাকায় সাধারণ মানুষের মুখে মুখে শুনা গেছে। 

সুন্দরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী বলেন, চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান দলের ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। এলাকায় ১০ টাকা কেজির চালের তালিকাসহ বিভিন্ন ভাতার টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যায় এলাকায়। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। 

৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, দু একজন ঘনিষ্ট ছাড়া ইউপি সদস্যদের সঙ্গে কোন সমন্বয় ছাড়াই তালিকা  তৈরি করা হয়েছে। তিনি ইউপি সদস্যদের মতামতের কোন তোয়াক্কা করেন না।

এব্যাপারে মাইনুল ইসলাম (চেয়ারম্যানের সহকারী) বলেন, আত্মীয়স্বজনের নামে কার্ড থাকতেই পারে। তাঁরা পাওয়ার যোগ্য বলে পেয়েছে। ১০ টাকা কেজির চালের তালিকায় স্বচ্ছল,দালানবাড়িওয়ালা ব্যক্তিদের অনেকের  নাম থাকার অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ইউনিয়নে অধিকাংশ  বাড়িই দালান। তবে তিনি বয়স্কভাতাসহ বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দিয়ে চেয়ারম্যানের হয়ে টাকা আদায়ের কথা অস্বীকার করেন।

সুন্দরপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বিভিন্ন ভাতার কার্ডের বিনিময়ে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তালিকায় আত্মীয় স্বজনের নাম থাকা প্রসঙ্গে বলেন, আত্মীয়স্বজনের মধ্যে গরিব থাকলে তাদের নাম আসতেই পারে। নিজের লোকদের মধ্যে একই পরিবারের একাধিক লোক সুবিধা পাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, অল্পক্ষেত্রে ভুলবসত এরকম হয়ে থাকতে পারে।  

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল ইসলাম সরকার এ ব্যাপারে বলেন,সুন্দরপুর ইউপি ১০ কেজির চালের তালিকায় ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দুর্নীতির কথা শুনেছি। এ নিয়ে সরেজমিনে তদন্তে যাওয়ার কথাও ছিলো। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারনে যেতে পারিনি। তবে শিগগিরই যাওয়ার ইচ্ছা আছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।         


মন্তব্য সমুহ
০ টি মন্তব্য
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন
এই শ্রেনির আরো সংবাদ

ফিচার নিউজ