ফৌজদারি আদালতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার ও তার বৈষম্য ও পক্ষপাতমূলক প্রভাব বিষয়ে রাজশাহীর এক বিচারকের গবেষণা প্রকাশ
- ৯ই এপ্রিল ২০২২ বিকাল ০৪:৫০:৫৯
- চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর
মেহেদি হাসান
ফৌজদারি আদালতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ফলে সমাজে কিভাবে বৈষম্য ও পক্ষপাতিত্ব পুনস্থাপিত হতে পারে, এই বিষয়ে রাজশাহীর এক বিচারককের গবেষণা কর্ম প্রকাশিত হয়েছে। সাধারনত অপরাধীর প্রবেশন, জামিন, অপরাধের সাজা নির্ধারণ, ও বারবার অপরাধ করার প্রবনতা নিরূপণে ফৌজদারি আদালতে সহায়ক প্রযুক্তি হিসেবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এরূপ অভিনব যান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়া সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ফৌজদারি আদালতে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালিত এ প্রযুক্তিকে ঝুঁকি মূল্যায়ন পদ্ধতিও বলা হয়ে থাকে।
তবে, বর্তমানে প্রচলিত এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মেশিনগুলোতে ইনপুট ডেটা হিসাবে সমাজের অতীতে বিদ্যমান পক্ষপাতিত্ব ও বৈষম্যমূলক ডেটা ব্যবহারের ফলে বিচারাঙ্গনে এই ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে নানবিধ আইনী ও নৈতকতার প্রশ্নে জোড়ালো বিতর্কও ইতোমধ্যে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পরেছে। এ পেক্ষাপটে, রাজশাহীর সহকারী জজ মোঃ আব্দুল মালেক আইন-আদালত, উন্নত প্রযুক্তি, ও নৈতিকতার এক আন্ত-বিষয়ক ও ভিন্নধর্মি গবেষণা কর্ম সম্পন্ন করেছেন, যা ইতোমধ্যে সুনামধন্য Springer Nature (স্প্রিঙ্গার নেচার) এর AI & Ethics (এআই এন্ড এথিকস) নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালিত রিস্ক আসেসমেন্ট অ্যালগরিদম কিভাবে নানা ধরনের প্রযুক্তিগত পক্ষপাতিত্ব ও পরিমাণগত বৈষম্যমূলক সিধান্তগ্রহণ করিতে আদালতকে প্রভাবিত করে, এ গবেষনায় এমন সকল বিষয়ের উপর বিশেষ ভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যেহেতু মানুষের ভ্রান্ততা এবং সহজাত পক্ষপাত ডেটা বা তথ্যের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অ্যালগরিদমে প্রবেশ করে, সেহেতু ডেটা-সমর্থিত এ সিস্টেমটি নির্দিষ্ট কোন জাতি বা গোষ্ঠীকে, যেমন আফ্রিকান ও এশিয়ানদের বেলায়, অনিবার্যভাবে ডেটা-প্রতিফলিত পক্ষপাত ও বৈষম্যমূলক আচারণ করিবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীদের বেলায়ও একই আচারণ করে থাকে এ ধরণের প্রযুক্তি।
এই গবেষক মনে করেন যে, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় এই ধরনের স্বয়ক্রিয় সিস্টেমের উপর বিচারকদের নির্ভরতা বৃদ্ধি পেলে যান্ত্রিক পক্ষপাতিত্ব, জাতিগত বৈষম্য এবং গণকারাবাসের মতো অবাঞ্ছিত ফলাফল বয়ে আনতে পারে, যা নিঃসন্দেহে আইন ও নৈতিকতার নিরিখে গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়াও, আদালতের মত সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মত উন্নত-প্রযুক্তি ব্যবহারের দরুণ সৃষ্ট সম্যসার সমাধানের সম্ভাব্য উপায় বাতলে দিয়েছেন এই বিচারক গবেষক। অধিকন্তু, এই সময়োপযোগী গবেষণা লব্দ জ্ঞান বাংলাদেশ সহ আদালতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে আগ্রহী সকল দেশে চলামান বিবাদ ও উদ্বেগ লাঘবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
০ টি মন্তব্য