মেহেদি হাসান
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইলামিত্র সংগ্রহশালা জেলা প্রশাসনের এক অনন্য উদ্যোগ। তেভাগা আন্দোলনের নেত্রীর ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এ সংগ্রহশালা নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলার রাওতাড়া গ্রামে ইলা মিত্র মঠের পাশেই ০. ২৬ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে ইলামিত্র সংগ্রহশালার মাটির দ্বিতল ভবন।
বিপ্লবী এই নারীর ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁনের নির্দেশনায় এমন মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। সংগ্রহশালাটি নির্মাণে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এর ঐতিহ্যকে। মাটি দিয়েই তৈরি করা হয়েছে শিল্পমÐিত দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল ভবনটি। ৮০০ বর্গফুট আয়তনের ভবনটির দোতলায় ওঠার জন্য সামনের বেলকনিতে কাঠের সিঁড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। কাঠের সিড়ি যা দৃস্টি নন্দনও বটে। সাথে রাস্তা এইচ বিবি করণ বাউন্ডারী ওয়াল, সংগ্রহ সালাটি আরো দৃস্টি নন্দন করার জন্য বনায়ন প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। ভবনটির কিছু দূরে আরেকটি মাটির ঘর নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য। সংগ্রহশালাটিতে তেভাগা আন্দোলন ও ইলা মিত্র সম্পর্কিত বই, পত্র-পত্রিকা, দুর্লভ স্থিরচিত্র ছাড়াও জেলার ঐতিহ্যবাহী উপাদান স্থান পেয়েছে। উদ্বোধনের আগেই এই সংগ্রহশালাটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান বলেন, বিপ্লবী নেত্রী ইলামিত্রের স্মৃতি সংরক্ষণে ইলামিত্র স্মৃতি সংগ্রহশালাটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সংগ্রহশালাটি দেখতে এরই মধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। উদ্বোধনের পর এ সংগ্রহশালাটি সবার জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হবে। যাতে নতুন প্রজন্মের মানুষ এই নেত্রীকে নিয়ে জানতে পারেন।
২০২২ সালে ইলা মিত্রের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গিয়ে একটি সংগ্রহশালার নির্মাণের উদ্যোগ নেন সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাইমেনা শারমীন। নির্মাণাধীন এ সংগ্রহশালা ইলিমিত্রের স্মৃতি সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন সবুজ হাসান।
এ বিষয়ে নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা সরকার বলেন, জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন স্যারের নির্দেশনা ও তদারকিতে আমরা এ সংগ্রহশালার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বিপ্লবী নারী ইলা মিত্রের স্মৃতি সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মকে সংগ্রহশালাটি ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দেবে। তিনি আরও বলেন, অনেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগির কাজ শেষে উদ্বোধন করা হবে।
জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন জানান, ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২৫ দফা নির্দেশনার ২২ ও ২৩ দফায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ, রক্ষণাবেক্ষণ ও জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকগণকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এছাড়াও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৪ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে “বিশেষভাবে শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমন্ডিত স্মৃতিনিদর্শন, বস্তু বা স্থান-সমূহকে, বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হইতে রক্ষা করিবার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন ” সুতরাং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, সাংবিধানিক অঙ্গীকার এবং একইসাথে এই জনপদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলায় সংঘটিত তেভাগা আন্দোলন (১৯৪৬-১৯৫০) এবং তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহ রক্ষা ও স্মৃতিচিহ্নসমূহ সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ইলা মিত্র ও তার স্বামী রমেন মিত্রের ভূমিকা ছিলো প্রশংসনীয়। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে তারা মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে প্রচারণা চালিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা প্রদান করেছেন। যার স্বীকৃতি হিসেবে ইলা মিত্র ও তার স্বামী রমেন মিত্র মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য মরণোত্তর মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ইলা মিত্রের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল এবং তিনি তার জীবদ্দশায় তাদের সাথে বিভিন্ন সময় সাক্ষাতও করেছেন। মহিয়সী এই নারীর স্মরণেও নাচোলের তেভাগা আন্দোলনের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে গড়ে তোলা হয়েছে ইলা মিত্র স্মৃতি সংগ্রহশালা। ইলা মিত্রের স্মৃতিধন্য নাচোলের রাওতাড়া গ্রামে ইলা মিত্র মঠের পাশে ০.২৬ একর জমির উপর নির্মিত হয়েছে এই সংগ্রহশালাটি। এটি নির্মাণে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ঐতিহ্যকে। মাটি দিয়েই তৈরী হয়েছে শিল্পমন্ডিত দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল ভবনটি। ৮০০ বর্গফুট আয়তনের ভবনটির দোতলায় উঠার জন্য কাঠের সিঁড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। সংগ্রহশালাটিতে তেভাগা আন্দোলন ও ইলা মিত্র সম্পর্কিত বই, পত্রপত্রিকা, দুর্লভ স্থিরচিত্র ছাড়াও জেলার ঐতিহ্যবাহী উপাদান এখানে স্থান পাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ইলা মিত্র স্মৃতি সংগ্রহশালাটির আয়তন বৃদ্ধি করে জ্ঞানচর্চার উপকরণসহ আগত দর্শনার্থীদের জন্য অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে।