মেহেদি হাসান
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুরে স্কুলছাত্রী কণিকা রানী ঘোষকে কুপিয়ে হত্যার অপরাধে বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ এবং আসামির জেল আপিল খারিজ করে গতকাল বুধবার বিচারপতি এ এন এম বসির উল্লাহ ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি। আসামিপক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী নারগিস আক্তার। ২০১৭ সালের ০১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. জিয়াউর রহমান ওই রায় দিয়েছিলেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবদুল মালেক গোবরাতলা ইউনিয়নের বালুগাঁ দিয়াড় গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে। পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য নথি হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামি জেল আপিল করেন। মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৭ মে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার দিয়াড় ধাইনগর গ্রামের লক্ষণ ঘোষের মেয়ে স্থানীয় মহিপুর এসএএম দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী কণিকা রানী ঘোষ তার তিন বান্ধবী তারিন আফরোজ, তানজিমা আক্তার ও মরিয়ম আক্তারকে নিয়ে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরছিল। পথে মহিপুর ডিগ্রি কলেজের পেছনের সড়কে আবদুল মালেক ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই চার ছাত্রীকে কোপাতে থাকে। মালেকের হাসুয়ার আঘাতে কণিকাসহ তার তিন বান্ধবী তারিন, মরিয়ম ও তানজিমা গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা কণিকা রানী ঘোষকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার দিনই নিহত কণিকার মা অঞ্জনা রানী ঘোষ বাদী হয়ে বখাটে মালেকের বিরদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে একই বছরের ৭ অক্টোবর আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। মাত্র ১৫ কার্যদিবসে ২১ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রমাণ ও যুক্তিতর্ক শেষে পরের বছরের ১ ফেব্রুয়ারি আসামির উপস্থিতিতে ওই রায় ঘোষণা করা হয়। বিচারিক আদালতের রায়ে আদালত কণিকাকে হত্যার জন্য ঘাতক আবদুল মালেককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর তিন ছাত্রীকে হামলার জন্য ৩২৪ ধারায় ১০ বছর, ৩২৬ ধারায় ১৪ বছর এবং ৩০৭ ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৫ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।