করোনাকালীন এ কঠিন সময়ে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ডা. গোলাম রাব্বানী

মেহেদি হাসান

 বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক হাহাকার অবস্থা চলছে। আলো-বাতাসে পরিপূর্ণ এই বায়ুমন্ডল। আর এই বায়ুমন্ডলের প্রায় ২১ শতাংশ অক্সিজেন। তারপরও মানুষের দেহে অক্সিজেনের অভাব। এ শুধু অভাব নয়, চলছে অক্সিজেনের তীব্র হাহাকার।

এতদিন আমরা কেউই বুঝতে পারি নাই অক্সিজেন নামের এই বায়বীয় পদার্থ টি আমাদের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য কি পরিমাণ অপরিহার্য। আজ প্রত্যেকটা করোনা আক্রান্ত রোগী অক্সিজেনের কি যে প্রয়োজন, অক্সিজেনের অভাবে কি যে কষ্ট হয় তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারছে। আর  চিকিৎসক হিসেবে আমি খুব কাছ থেকে তা অনুধাবন করছি।

মানুষের দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ অথবা তার থেকে বেশি থাকলে ভালো হয়। কিন্তু যখনই ৯৩ অথবা  তার নিচে নেমে যায় তখনই মানুষের দেহে অক্সিজেনের অভাব জনিত কষ্ট শুরু হয়। আর এই অক্সিজেনের লেভেল যখন আরও নিচে নেমে যায় যেমন ধরুন ৫০% অথবা আরও নিচে তাহলে একবার অনুধাবন করুনতো কি পরিমান কষ্ট হয় এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের। একমাত্র ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ তা অনুধাবন করতে পারে না। 

 এইসব করোনা আক্রান্ত অক্সিজেনের অভাব জনিত অসহায় নিরীহ মানুষগুলোর আকুতি এবং কষ্ট দেখতে দেখতে আমি এখন দিশেহারা হয়ে গেছি। নিজের বিবেকের কাছে বারবার দংশিত হচ্ছি। আমি কেন তাদের জন্য কিছু করতে পারছিনা? কেন এই সমাজ তাদের জন্য এগিয়ে আসছে না? আমরা কি শুধুই সরকারি ব্যবস্থাপনার দিকে তাকিয়ে থাকব? 

আমাদের আধুনিক সদর হাসপাতালে সরকারি পর্যায়ে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে তাতে সর্বসাকুল্যে পনের থেকে বিশ জনের মত রোগীর সেবা করা যেতে পারে। কিন্তু তার থেকে বেশি হলে সেটা সম্ভব না। কিন্তু বর্তমানে চাপাইনবাবগঞ্জে করোনা আক্রান্ত ভর্তিযোগ্য রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। অনেক রোগী খুব ক্রিটিকাল অবস্থায় থাকার পরেও একমাত্র অক্সিজেনের অভাবের কারণে হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে এই মুমূর্ষু রোগী গুলোর আকাল মৃত্যু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। বাস্তবে হচ্ছেও তাই।

প্রতিদিন অনেক করোনা আক্রান্ত রোগী অক্সিজেনের তীব্র অভাবজনিত অবস্থায় আমার কাছে আসছে। আর আমি খুবই অসহায় বোধ করছি কারণ এই মানুষগুলোর জন্য কিছুই করতে পারছিনা। আজকেই একটা রোগী যার অক্সিজেনের মাত্রা ছিল ৬৬ শতাংশ, এই রোগী টাকে ভর্তি করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করলাম, কিন্তু কোন সিট ফাঁকা নাই। কি জানি হয়তো এতক্ষণে রোগীটা মারায় গেছেন।

তাই সরকারি ব্যবস্থার পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সমস্ত বিত্তশালী অর্থশালী এবং শিল্পপতিদের প্রতি আকুল আবেদন, আপনারা এই দূর্যোগের সময় এই  অসহায় মানুষগুলোর সাহায্যার্থে এগিয়ে আসুন। আপনারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় অনেক অর্থ খরচ করেন। মানুষকে সাহায্য‌ও করেন।আপনাদের যে বিপুল অর্থের সম্ভার রয়েছে সেখান থেকে সামান্য একটু অংশ যদি এই নিরুপায় মানুষগুলোর জন্য ব্যয় করেন তাহলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক মৃত্যুপথযাত্রী রোগী মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যেতে পারে। 

 এই মুহূর্তে একটা, শুধু মাত্র একটা জিনিসের খুব প্রয়োজন, তাহলো অক্সিজেন অক্সিজেন এবং অক্সিজেন। 

 অনেক শিল্পপতি এবং বিত্তশালী মানুষ আছেন আমাদের এই চাপাই নবাবগঞ্জে।  আপনারা যদি এই মুহূর্তে ৫০ থেকে ৬০ টা 6.8 M3 সাইজ অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন এবং তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক কিছু, তাহলে আমাদেরকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। আর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অপমানজনক উক্তিও শুনতে হবে না। 

আসুন এবার এদিক সেদিক না তাকিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য নিজেদের দক্ষিণ হস্ত প্রসারিত করি।

আমার বিশ্বাস, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবেন। আর সবার সহযোগিতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ একদিন করোনামুক্ত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ

ধন্যবাদ।

কপিরাইট © চাঁপাই নিউজ ডট কম ২০২৪ । সর্বসত্ব সংরক্ষিত।