অসুস্থ ও গর্ভবতী পশু জবাই করে মাংস বিক্রি! আতঙ্কিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরবাসী

মেহেদি হাসান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নিউমার্কেট, নতুনহাট,বটতলাহাটসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করার আগে   কসাইখানায় অসুস্থ ও গর্ভবতী গরু-ছাগল জবাই করে মাংস বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। জবাইয়ের আগে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এ সুযোগে কতিপয় অসাধু কসাই বেশি মুনাফার লোভে অসুস্থ ও গর্ভবতী গরু-ছাগল কম দামে কিনে এর মাংস বিক্রি করছেন। তথ্য রয়েছে, গত শুক্রবার জেলা শহরের বালিগ্রামস্থ পৌর কসাইখানায় একটি গর্ভবতী গাভী জবাই করে মাইকিং করে কম দামে বিক্রি করা হয়েছে মাংস। পরের দিন শনিবার সকালে কসাইখানার বর্জ ব্যবস্থাপনার ভাগাড়ে একটি বস্তায় মৃত বাছুর উদ্ধার করে এলাকাবাসী। এনিয়ে স্থানীয় কয়েকজন যুবক এর ভিডিও ধারন করে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শহরবাসী। 

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহের শুক্র, শনি, মঙ্গল ও বুধবার ৪দিনে প্রতিদিন ১৫-২০টি গরু-ছাগল জবাই হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর কসাইখানায়। জবাই করা এসব গরুর অধিকাংশই অসুস্থ। গত ২৩ অক্টোবর শুক্রবার ৮ মাসের গর্ভবতী গাভী জবাই করার পর নিউমার্কেটে মাংশ বিক্রি করা হয়। পরেরদিন শনিবার সকালে এলাকবাসী মৃত বাছুর পড়ে থাকতে দেখলে স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে এর বিচার দাবি করেন। এর প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো কসাইরাই হুমকি দেয় বলে জানায় স্থানীয়দের। স্থানীয় বাসিন্দা মো. রুবেল, গিনি বেগম, মিজানুর রহমানসহ আরো কয়েকজন বলেন, পৌর কসাইখানার পাশের ভাগাড়ে শনিবার সকালে একটি বস্তাকে কুকুর ছিড়ে খেতে দেখা যায়। পরে সবাই এগিয়ে গিয়ে বস্তা খুলে দেখতে পায় মৃত একটি বাছুর। পরে জানা যায়, ৮ মাসের গর্ভবতী গরুকেই সেদিন জবাই করা হয়। পরে সেই মাংস জেলা শহরের নিউমার্কেটে কম মূল্যে মাইকিং করে বিক্রি করা হয়। তবে গরুটি কার কাছ থেকে কেনা হয়েছে ও কোন কসাই তা করেছে বিষয়টি জানা যায়নি। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, এর আগেও এমনভাবে অসুস্থ ও গর্ভবতী গরু-ছাগল জবাই করা হয়েছে। আমরা মাঝেমধ্যেই এমন খবর পেলেও তাদের বিরুদ্ধে বলতে গেলে উল্টো তারাই বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়। শনিবার মৃত বাছুর উদ্ধারের পর পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর বারেক আলী, মহিলা ওয়ার্ড সদস্য মাসকুরাকে জানানো হয়েছে। এখানকার ডাক্তার ও পৌরসভার প্রতিনিধিরা অর্থের বিনিময়ে এসব অপরাধ করে থাকে। এমনকি ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকেও এটি হারাম। আমরা তদন্ত করে এর বিচার চাই। 

কসাইখানার নৈশপ্রহরী মনিরুল ইসলাম বলেন, ৭-৮ বছর ধরে এখানে নাইট গার্ড হিসেবে ও কসাইখানার ধোয়া মোছার কাজ করি। গরু জবাইয়ের সময় আমি বাইরে থাকি এবং ডাক্তার, পৌরসভার ইন্সপেক্টর ও মৌলভী ভেতরে থাকে। আমিও শুনলাম শুক্রবার রাতে জবাই করা গরুর পেটে ৮ মাসের বাছুর ছিলো, যা এই এলাকার লোকজন জানাজানি হয়েছে। বিষয়টি যেহেতু ঘরের মধ্যে হয়েছে, আর আমি বাইরে ছিলাম তাই আমি জানি না। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার প্রতিনিধি ও পৌর কসাইখানার পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম জানান, সেদিন সকাল ৫টা ৩০ মিনিটে কসাইখানায় আমি উপস্থিত হয়। ভেটেরিনারি সার্জনের প্রতিনিধির পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুমতি পেলেই তার উপস্থিতিতে  পশু জবাই করা হয়। পরে মার্কেটে বাজারজাত করার উদ্দেশ্য মাংশ নিয়ে যাওয়া হয়। আমি শুধু পৌরসভার একজন প্রতিনিধি হিসেবে সীলমোহর দেয়। এছাড়া আর কিছু জানি না, কারন পশু অসুস্থ বা গর্ভবতী কি না তা পরীক্ষা করেন ভেটেরিনারি সার্জনের প্রতিনিধি। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর কসাইখানায় উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জনের প্রতিনিধি ও উপ-সহকারী প্রানীসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ গর্ভবতী ও অসুস্থ পশু জবাই কাজে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ধরে কসাইখানায় ভেটেরিনারি সার্জনের প্রতিনিধি হিসেবে পশু জবাইয়ের পূর্বে পরীক্ষার কাজ করে আসছি। পরীক্ষায় অসুস্থ বা গর্ভবতী পশু ধরা পড়লে জবাই করার অনুমতি দেয় না। কিন্তু আমি চলে আসার পরেও আমার চোখ এড়িয়ে কসাইরা গরু জবাই করে। আমি চলে আসার পর তখনই এমন ঘটনা ঘটতে পারে। 

জেলা প্রানীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অসুস্থ বা গর্ভবতী পশু জবাই করা আইনগতভাবে মারাত্মক অপরাধ। বিষয়টি নিয়ে আগামীতে যথাযথভাবে তদারকি করা করা হবে।


কপিরাইট © চাঁপাই নিউজ ডট কম ২০২৪ । সর্বসত্ব সংরক্ষিত।