বিদায় নিচ্ছেন জনবান্ধব জেলা প্রশাসক এ জেড এম নুরুল হক

মেহেদি হাসান

মেহেদি হাসান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ  জেলার মানবিক ও জনবান্ধব জেলা প্রশাসক এ জেড এম নুরুল হক বিদায় নিচ্ছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আগামী দু-একদিনের মধ্যেই তিনি আগামী কর্মস্থল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো  দপ্তরে পরিচালক হিসাবে যোগদান করবেন।

২০১৮ সালের ১১ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করে বিগত দিনগুলোতে বিভিন্ন সময়োপযোগী কার্যক্রমের ফলে পাল্টে গেছে জেলার  সার্বিক চিত্র।

জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতে নজর রাখা, বর্তমান পরিস্থিতিতে চলমান করোনা প্রতিরোধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু, ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু ইউনিট চালু, সদর হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিয়মিত চিকিৎসা প্রদান করার তদারকি,  জেলার গরীব দুঃখী মানুষের জন্য জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রতি বুধবার গণশুনানিতে আর্থিক সহায়তা, সেলাই মেশিন প্রদান, করোনা কালীন সময়ে জেলার ৫ উপজেলায় সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সরকারি ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান, শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে স্কুল-কলেজগুলোতে আকস্মিক পরিদর্শন, বঙ্গবন্ধু জীবনী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রকাশনা  ও  অগ্নিস্বাক্ষর বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিজয় র‌্যালী, হরিমোহন ও গার্লস স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা,  প্রতিটি অফিসে সেবার মান বৃদ্ধি এবং ভোগান্তি কমানো,  মুজিব বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে মাসব্যাপী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও আলোচনা সভা, জেলায় গৃহহীন মুক্তিযোদ্ধাদের ও  প্রকৃত গৃহহীনদের মাঝে গৃহ প্রদান, সরকারি বিভিন্ন চলমান প্রকল্প অগ্রগতি পর্যালোচনা ,সার্কিট হাউস থেকে অক্টয় মোড় পর্যন্ত হযরত শাহজালাল রোড স্থাপন, সার্কিট হাউজ আধুনিকীকরণ, জেলা প্রশাসনের প্রশাসনিক ভবন আধুনিকীকরণ, প্রশাসনিক ভবনের ছাদ বাগান তৈরি, ইউনিয়ন পরিষদ গুলোর কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং, জেলার অধিকাংশ জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, প্রকৃত কৃষকের মাঝে উপকরন বিতরন, বৃক্ষরোপণ অভিযান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিড ডে মিল চালু, প্রকৃত হতদরিদ্রদের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়া, প্রতি সপ্তাহে ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা, হাট বাজারগুলো আধুনিক করা, স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখা, প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে খাস জমি বন্টন, ভিক্ষুকমুক্ত করণে ডাটাবেজ তৈরী,  জেলা প্রশাসকের ডাকবাংলো এলাকায় জঙ্গল পরিষ্কার করে বসবাসযোগ্য করে তোলা, নবাবগঞ্জ টাউন ক্লাব হতে  মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া চালুকরণ, অবৈধ বালুমহল বন্ধ করা, কালেক্টরেট চত্বরের আম বাগানের পরিচর্যা, পর্যটন কেন্দ্র চালু করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা,  ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের পূর্বের চিত্র পরিবর্তন করে নতুন সাজে রুপান্তিত করেন। ভুমি সেবাকে সহযোগীকরন , বাল্য বিবাহের হার প্রায় শুন্যতে আনেন প্রভূতি কাজের জন্য পাল্টে গেছে পুরো জেলার চিত্র।

বিশেষ করে আদিবাসী ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিভিন্ন প্রশংসনীয় কাজ করেছেন, আমনুরা  ফিল্টি  পাড়ায় উন্নয়ন সংলাপ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ  সকল সম্প্রদায়কে নিয়ে ৬৬দিন ব্যাপী মুজিবমঞ্চে অনুষ্ঠান, মানবিক মূল্যবোধে ও নদীভিক্তিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চালু।  নিজে উপস্থিত থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হলেও সরকারি বিভিন্ন আদেশে অভিযান পরিচালনা করছেন।

প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখায় অর্জন করেছেন বিভাগীয় শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি।

সাম্প্রতিককালে মরণব্যাধি করোনা ভাইরাস রোধে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে কাজ করেছেন কখনও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, কখনো প্রতিরোধে প্রচারণা, কখনো আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাসায় থাকার জন্য হোম কোয়ারেন্টেইন দেখা শুনা করা, রোগীদের নিয়মিত খোঁজ রাখা, রোগীর বাসায় গিয়ে খাদ্য সামগ্রী প্রদান, বিভিন্ন ইউনিয়নে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ দেখভাল কাজ করায় জেলা বাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।

জেলার কয়েকজন সচেতন লোকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাঁর ফলেই অফিসগুলোতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ভোগান্তি কমেছে এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে।

যা না বললে নয় তিনি যে সৎ, যোগ্য, কর্মঠ দক্ষতার বলিয়ান তা  তার কাজ প্রমাণ করে । চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাসীকে তাকে আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।


কপিরাইট © চাঁপাই নিউজ ডট কম ২০২৪ । সর্বসত্ব সংরক্ষিত।