মেহেদি হাসান
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ছুটে যান এক করোনারোগী। বিষয়টি জানতে পেরে রোগী হাসপাতালে পৌঁছাবার আগে থেকেই হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ফটকে দাঁড়িয়ে ছিলেন জরুরী বিভাগের চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা না থাকায় তাঁকে রাজশাহী মিশন হাসপাতালে চলে যেতে বলেন তারা।
চিকিৎসকদের এমন অমানবিক আচরণে বিমূঢ় হয়ে মা ও বড় বোনের কাঁধে হেঁটে হেঁটেই কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে ফিরে যান সেই রোগী। প্রথমে অ্যাম্বুলেন্স না পেলেও পরে সদর হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে রাত প্রায় দুটোর দিকে রাজশাহী যান তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার এক করোনারোগীর সঙ্গে।
ওই করেনারোগী শনিবার বিকেলে বলেন, লকডাউনের পর বাসায় ছিলাম। হঠাৎ শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় আমর। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে আমার খোঁজখবর নেয়ার দায়িত্বে থাকা একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শককে মুঠোফোনে কল দিয়ে বিষয়টি জানাই। এতে আমার জন্য চিকিৎসা সাহায্য কামনা করি। তাঁকে জানানোর কিছুক্ষণ পর তিনি বলেন, সদর হাসপাতালে চলে যান সেখানে বলা আছে। বাড়ি লকডাউনের বিষয়টি জানিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করি, কীভাবে বের হব? আমার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করা যায় না? ব্যবস্থা না হওয়ায় কোনমতে একটি রিক্সা জোগাড় করে হাসপাতালে রওনা দেই। হাসপাতালে গিয়ে দেখি, ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসারসহ (ইএমও) স্বাস্থ্যকর্মীরা জরুরী বিভাগের গেট ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দূর থেকেই রিক্সা থামাতে বলেন তাঁরা। কাছে ঘেঁসতেও নিষেধ করেন। ইএমও বলেন, কাগজপত্র করে দিচ্ছি, রাজশাহী মিশন হাসপাতালে চলে যাও। এখানে কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। তাঁকে অ্যম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানালেও তিনি তা দিতে পারেননি। তিনি বলেন, করোনা অসুখের কথা কাউকে জানিয়ে গোপনে কোন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা কর। আর তাড়াতাড়ি হাসপাতাল এলাকা ত্যাগ কর। আশেপাশে থাকা লোকজনও এলাকা থেকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে বলেন। সকলের আচরণটা ছিল আমাকে তাড়িয়ে দেয়ার মতই।
এসময় হাসপাতালের সামনে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজ করি। তাঁরাও যেন কীভাবে বিষয়টি জানতে পেরে আমাকে নিয়ে যেতে অসম্মতি জানান। আশেপাশে থাকা সকল রিক্সা-অটোরিক্সাগুলোও পালিয়ে যায়। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে মা ও বড় বোনের কাঁধে ভর দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির পথে হাঁটা দেই। চিকিৎসকসহ আশেপাশের লোকজনের আচরণ জীবনে ভুলবোনা। পরে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স যেতে রাজি হলে রাত দুইটার দিকে রাজশাহী রওনা দিই। রাত সাড়ে তিনটার দিকে রাজশাহী মিশন হাসপাতালে ভর্তি হই।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, হাসপাতালের ইএমও রোগীকে ভর্তি করতে ভয় পেয়েছে। এটা তদন্ত করে দেখা হবে। তবে করোনারোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নেই হাসপাতালে। শিগগিরই এর ব্যবস্থা করা হবে।
'তবে যে এতদিন ধরে বলে আসা হচ্ছে, করোনারোগীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড ও মেডিকেল টিম প্রস্তুত আছে? এ প্রশ্নের কোন সদুত্তোর দেননি তিনি।
হাসপাতালের আরএমও নাদিম সরকার বলেন, রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার মত কোন ব্যবস্থা ছিলো না। পালস্ অক্সিমিটার হাতে পেয়েছি আজ (শনিবার)। হাইফ্লো ক্যানুলা হাতে পাইনি এখনো। ঢাল-তলোয়ার না থাকার মতই অবস্থা। তবে খুব শিগগিরই এর ব্যবস্থা হবে। তবে হাসপাতালের নব নির্মিত ভবনে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থায় ৫৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। কিন্তু গণপূর্ত বিভাগ সংযোগ স্থাপন করেছে মাত্র তিনটির সঙ্গে। এক সঙ্গে পাঁচজন রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন পড়লে দেওয়া সম্ভব হবে না।
তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাসপাতালে মাত্র দুটি অ্যাম্বুলেন্স। চালক দুজনের মধ্যে একজন ছুটিতে ছিলেন। আর একজন রোগী নিয়ে গিয়েছিলেন রাজশাহী। সেখান থেকে ফিরে করোনারোগী নিয়ে যেতে দেরি হয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ইএমও সাবদুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জান্নাতই- নূর বলেন, সবগুলোর পাইপ আমাদের কাছে নেই। তবে ১২ টি প্রস্তুত আছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাহিদা দিলেই সংযোগ দেওয়া হবে।