News Desk
এম.এ.মাহবুব : চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাংবাদিকতায় যাঁদের পথিকৃত হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাঁদের মধ্যে মজিবুর রহমান তারুমিয়া অন্যতম। যিনি তারু মাষ্টার নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। ১৯৪৬ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাশ করে দেশে ফিরে কৃষ্ণগবিন্দপুর হাইস্কুলে শিক্ষকতা জীবন শুরু করলেও ১৯৪৯ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের হরিমোহন স্কুলে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
যতদুর জানাজায়, ১৯৫০ সালে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান (এপিপি) তে নবাবগঞ্জ থেকে তিনিই প্রথম সংবাদ প্রেরণ করেন যা পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ইংরেজি বেশ কয়েকটি পত্রিকায় ছাপানো হয়েছিলো। এর পরই তিনি নবাবগঞ্জে এপিপি’র নিজস্ব সাংবাদদাতার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে ডেইলি মর্নি নিউজেও কাজ করেছেন তিনি।
এছাড়া তিনি ছাপাখানার জন্য ১৯৫৩ সালে জাপান থেকে একটি ট্রাডেল মেশিন আমদানি করে ‘আলোর পথে প্রেস’ নামে একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন। পরে ১৯৫৪ সালে ‘আলোর পথে’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদন শুরু করেন, যা ১৯৫৯ সালের কোন এক সময় পর্যন্ত চালু ছিলো। তাই একথা অনস্বিকার্য যে, তারু মিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র দু’ক্ষেত্রেই পথিকৃত ছিলেন। ১৯৬৩ সালে নবাবগঞ্জে ‘মহকুমা সাংবাদিক সমিতি’ নামে সাংবাদিকদের যে প্রথম সংগঠন তৈরী হয়েছিলো সে সংগঠনেরও সভাপতি ছিলেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাংবাদিকতায় আরেক উজ্জল নক্ষত্র ছিলেন শিবগঞ্জ উপজেলার মহসীন আলী আহম্মদ ওরফে মহসীন মাষ্টার। তিনিও ষাটের দশকের গোড়ার দিকে সাংবাদিকতায় আসেন। জাতীয় সংবাদ সংস্থা, দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইনকিলাবসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তিনি কাজ করেছেন।
মহসীন মাস্টারের পর তৃতীয় সাংবাদিক হিসেবে যার নাম পাওয়া যায় তিনি হলেন, শ্রী মোহিত কুমার দাঁ। ১৯৬০ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭৩ সালের ফেব্রæয়ারী মাস পর্যন্ত তিনি দৈনিক ইত্তেফাক এর সাংবাদিক হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন। এসময় তিনি অফিস থেকে সংবাদ লেখার প্যাড, খাম ও ১০পয়সা লাইনএজ পেতেন। ১৯৬৫ সালে একটি আলোচিত সংবাদ পরিবেশনের কারনে ইত্তেফাকের মফস্বল সাংবাদিকদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করায় তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া তাঁকে একটি আগফা ক্যামেরা উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন।
এছাড়াও ষাটের দশকে আর যারা সাংবাদিকতায় ছিলেন তাঁরা হলেন, ডা. আব্দুল মতিন (সাপ্তাহিক পূর্ব-দেশ), শাহ জামান (পাকিস্তান অবজারভার), বেগম আজীজা এন.মোহম্মদ (ইউপিপি ও রাজশাহী বার্তা), সাবের জামিল (দৈনিক আজাদ) প্রমূখ। তাছাড়া ডি.এম. তালেবুন্নবী (দৈনিক পাকিস্তান) বর্তমানে দৈনিক জনকণ্ঠে কর্মরত, আফজাল হোসেন (উত্তরবঙ্গ বুলেটিং), আফসার হোসেন (দৈনিক পয়গাম) এর শিক্ষানবীশ সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এখানে একটি উল্লেখ্য না করলেই নয় তা হলো, সেসময় মহকুমা সাংবাদিক সমিতি গঠনে যিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিলেন তিনি হলেন, তৎকালিন সময়ে নবাবগঞ্জ মহকুমার এস.ডি.পি.আর.ও আবুল কালাম শেখ নূর মোহাম্মদ যিনি আ.ক.শ. নূর মোহম্মদ নামেও পরিচিত ছিলেন। আর এই সমিতিকে জোরদার করার জন্য তৎকালিন মহকুমা হাকিম মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দীন সি.এস.পি একটি আলমারি, চেয়ার, টেবিল ও একটি রেডিও সেটসহ দুই হাজার টাকা মূল্যের সম্পদ দান করেছিলেন। এসব নিয়ে আ.ক.শ. নূর মোহম্মদ এর ভাড়া বাড়ীতেই এই সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত হতো।
পরে ১৯৬৬ নবাবগঞ্জ মহকুমার এসডিও আব্দুল মালেকের সার্বিক সহযোগীতায় নবাবগঞ্জ প্রেসক্লাব গঠন ও ক্লাব ভবনের কাজ শুরু হয়। সেসময় প্রেসক্লাবের ফান্ড সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকরা বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও গুলশান সিনেমা হলে ‘ধারাপাত’ নামের একটি ছবি প্রদর্শন করেও বেশ কিছু ফান্ড সংগ্রহ করা হয়েছিলো।
এরপর সত্তর’র দশকে যারা সাংবাদিকতায় আসেন তাদের মধ্যে শিবগঞ্জের অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন (দৈনিক বর্তা), জি.কে.এম. শামসুল হুদা (বাসস ও বাংলাদেশ বেতার), অধ্যাপক গোলাম রসুল (দৈনিক সংগ্রাম), ডা. আলাউদ্দিন (বাংলাদেশ টাইমস), ডা. বুলবুল-এ-গুলিস্তান (বাংলার বানী), তসলিম উদ্দীন (ইত্তেফাক), জবদুল হক (রাজশাহী বার্তা, শিবগঞ্জ প্রতিনিধি বর্তমানে যুগান্তরের শিবগঞ্জ প্রতিনিধি), মোদাসসের হোসেন (দৈনিক আজাদ), তসিকুল ইসলাম বকুল (ইউএনবি), আব্দুর রাজ্জাক রাজু (দৈনিক দেশ, দৈনিক দিনকাল), এস.এম.জি ফারুক স্বপন (দৈনিক প্রতিদিন), শামিম উদ্দীন (দৈনিক বার্তা), আলিমুল হক সিদ্দকী (অবজারভার), বজলার রহমান ছানা (বিপিআই), বুলবুল চৌধুরী (দৈনিক দেশ), শামসুল ইসলাম টুকু (দৈনিক দৈনিক বর্তা), এ্যাডভোকেট আঃ সামাদ (ইষ্টার্ণ নিউজ এজেন্সি-এনা) অন্যতম।
শাসক শ্রেনী বা ক্ষমতাসীনদের সাথে গণমাধ্যমের দ্ব›দ্ব চিরোকাল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাংবাদিকতায় এর ব্যাতিক্রম ঘটেনি। একাত্তর পরবর্তী সময়ে নবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবে কয়েকবার হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এসময় তৎকালিন দৈনিক বাংলার সাংবাদিক ডি.এম. তালেবুন নবী হামলাকারীদের দ্বারা শারিরীকভাবে লাঞ্চনার শিকার হন। সে সময়ের এমপি ডা. আ.আ.ম মেশবাহুল হক বাচ্চু সংসদে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিলে জাসদের এমপি মঈনুদ্দিন মানিক সংসদের নবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবে হামলার বিষয়ে নিন্দা জানান এবং ঢাকায় সংসদের সাংবাদিকরা বাচ্চু ডাক্তারকে বয়কটের ঘোষনা দেন। পরে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ তথা নির্মল সেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী ও কামাল লোহানী প্রমূখ চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রেসক্লব পরিদর্শণে আসেন। প্রেক্ষিতে নবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবে বেশ কিছুদিন পুলিশ প্রহরা দেয়া হয়েছিলো।
আশি’র দশকে যারা সাংবাদিকতায় আসেন তারা হলেন, মিজানুর রহমান কুটু (দৈকি সংগ্রাম) বর্তমানে দৈনিক নয়া দিগন্ত কর্মরত, গোলাম মোস্তফা মন্টু (সাপ্তাহিক নবাবগঞ্জ সংবাদ) বর্তমানে মানবকন্ঠে কর্মরত, মাহবুবুল আলম (দৈনিক ইনকিলাব), আনোয়ার হোসেন দিলু (ভোরের কাগজ) বর্তানে প্রথম আলো’য় কর্মরত, সৈয়দ নাজাত হোসেন (দৈনিক বার্তা, তার আগে ঢাকায় ছায়াছন্দ ও চিত্রবাংলায় ঢাকায় কাজ করতেন) পরে তিনি সাপ্তাহিক নবাবগঞ্জ বার্তা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রথম দৈনিক পত্রিকা দৈনিক নবাব সম্পাদন করেছেন, সুকুমার প্রামানিক, বরেন্দ্র কাগজ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন, ন.স.ম মাহবুবুর রহমান মিন্টু (নিউজ ডে) বর্তমানে বাসস ও ডেইলি ইন্ডেপেন্ডেন্টে কর্মরত, মনিরুল ইসলাম বাদল (দিনকাল ও নতুন প্রভাত, রাজশাহী) আলমগীর কবির কামাল (দৈনিক খবর), নাইমুল হক (দৈনিক জনতা), এমরান ফারুক মাসুম (সাপ্তাহিক খবর) বর্তমানে আরটিভি ও বিটিভিতে কর্মরত এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বর্তমানে চাঁপাই দৃষ্টি নামে একটি পত্রিকা সম্পাদন করছেন, শহীদ শুকরানা ডালু (বাংলার মুখ), মোঃ শহীদুল্লাহ (মিল্লাত) প্রমুখ।
এছাড়াও সৈয়দ নাজাত হোসেন সম্পাদিত সাপ্তাহিক নবাবগঞ্জ বার্তা প্রকাশ হওয়ার পর একদল তরুণ সাংবাদিকতায় আসেন। তাদের মধ্যে জোনাব আলী (বর্তামানে সাপ্তাহিক সোনামসজিদ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন), শহিদুল হুদা অলক (বর্তমানে এনটিভি ও কালের কন্ঠে কর্মরত আছেন এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকম নামে একটি অনলাইন পত্রিকা সম্পাদন করেন), আমিনুল ইসলাম (বর্তমানে দৈনিক সমকাল ও একুশে টেলিভিশনে কর্মরত) এবং আনু মোস্তফা (বর্তমানে যুগান্তরের রাজশাহী ব্যুরো চীফ হিসেবে কর্মরত আছেন) অন্যতম।
নব্বইয়ের দশকে আসা সাংবাদিকরা হলেন, মতিউরর রহমান (টেলিগ্রাম, মর্নিং সান), মাশিউর রহমান মসি (দৈনিক কালবেলা), এনায়েত করিম উজ্জল (নব অভিযান), কামাল উদ্দীন (সোনার দেশ, করতোয়া) বর্তমানে বৈশাখী টিভিতে কর্মরত এবং চাঁপাই চিত্র নামে একটি পত্রিকা সম্পাদন করেন, ডাবলু কুমার ঘোষ (পাবনা বার্তা) বর্তমানে আমাদের সময় ও মাছারাঙ্গা টেলিভিশনে কর্মরত, জাফরুল আলম (দৈনিক সমাচার) বর্তমানে সাপ্তাহিক সীমান্তের কাগজ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদন করছেন, রফিকুল আলম (চাঁদনি বাজার) বর্তমানে বাংলাদেশ প্রতিদিনে কর্মরত, নাসিম মাহমুদ (বিএনএস) বর্তমানে ইউএনবি ও এটিএন বাংলায় কর্মরত, আহসান হাবিব (সীমান্তের কাগজ ও বীর বার্তা) বর্তমানে এসএ টিভি ও কালের কণ্ঠে কর্মরত, হুসেন শাহনেয়াজ (দেশ বাংলা) বর্তামানে অর্থনীতির কাগজে কর্মরত।
পরবর্তীতে সময়ে আসা সাংবাদিকদের মধ্যে, ইমতিয়ার ফেরদৌস সুইট (গাজী টিভি, করতোয়া ও যুগান্তর), ফয়সাল মাহমুম (ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন ও যায়যায়দিন), রবিউল হাসান ডলার (বিডি নিউজ, ডেইলি স্টার ও রেডিও টুডে), মনোয়ার হোসেন জুয়েল (সকালের খবর, যমুনা টেলিভিশন), আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু (চ্যানেল আই ও ‘চাঁপাই দর্পণ‘ নামে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করেন), আজিজুর রহমান শিশির (নিউ নেশান), সাজেদুল হক সাজু (দৈনিক ভোরের পাতা), মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (আলোকিত বাংলাদেশ), এম.এ.মাহবুব (সময় টেলিভিশন), আব্দুল মালেক (ভোরের কাগজ, দেশ টিভি), একেএস রোকন (একাত্তর টিভি), তারেক রহমান (মোহনা টিভি), আশরাফুল আলম সিদ্দিকী কাজল (দৈনিক সংগ্রাম), কামাল শুকরানা (রাজ বার্তা), আনোয়ার হোসেন চৌধুরী (চ্যানেল টুয়েন্টিফোর ও ঢাকা ট্রিবিউন), হারুন-অর-রশিদ (খবরপত্র), শাখাওয়াত জামিল দোলন (বাংলাভিশন), অলিউজ্জামান রুবেল (প্রতিদিনের সংবাদ), মেহেদী হাসান (লাল গোলাপ), জহুরুল ইসলাম (ডিবিসি নিউজ), মাহবুবুল ইসলাম ইমন (চ্যানেল নাইন), আশরাফুল ইসলাম (বিজয় টিভি), আব্দুর রব নাহিদ (দৈনিক খোলা কাগজ) ও ক্রীড়া সাংবাদিক শহীদুল হক সুয়েল অন্যতম।
এছাড়াও বিভিন্ন সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জে যারা সাংবাদিকতায় পদাচারণ করেছেন তাদের মধ্যে, ড.মাযহারুল ইসলাম তরু (দৈনিক বার্তা) বর্তমানে বিভাগী প্রধান, বাংলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ, গোলাম রশিদ (দৈনিক মাতৃভ‚মী), এ.কে.রেজাউন নবী তপু (সাপ্তাহিক বিচিত্রা), সাত্তার হোসেন (বাংলাদেশ টুডে, বাংলার চোখ), জিয়াউল হক সবুজ (দৈনিক নবাব) বর্তমানে বাংলাভিনের সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত, তাসকিনা ইয়াসমিন এমি (দৈনিক নবাব) , জাহিদুর রহমান হিমেল (সীমান্তের কাগজ), আবুল কাশেম (গৌড় সংবাদ), হযরত আলী (সাপ্তাহিক দুনিয়া), এম.এ.জামান হীরো (গৌর সংবাদ) অন্যতম।
সংবাদপত্র :
আলোর পথে : চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাংবাদিকতার পথিকৃত মজিবুর রহমান তারু মিয়া ওরফে তারু মাষ্টার ১৯৫৩ সালে ‘আলোর পথে প্রেস’ নামে একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন। পরের বছর তিনি ‘আলোর পথে’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদন শুরু করেন যা ১৯৫৯ সালের কোন এক সময় পর্যন্ত চালু ছিলো বলে জানাযায়। তবে ডিএফপির তালিকাতে এর নাম বা কারো কাছে কোন সংরক্ষিত কপি পাওয়া যায়নি।
নবাবগঞ্জ সাময়িকী : ১৯৬৪ সালের ২৩ মার্চ ‘নবাবগঞ্জ সাময়িকী’ একটি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যার সম্পাদনায় ছিলেন বেগম আজিজা এন. মোহম্মদ। মুলত এটি ছিল সরকারের মুখপত্র। যা বুলবুল প্রেস, নবাবগঞ্জ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হতো। ২০ পৃষ্ঠার এই পত্রিকার মুল্য ছিল ২৫ পয়সা। ১৯৬৬ সালে পত্রিকাটি মাসিকে পরিণত হয়।
নবাবগঞ্জ বার্তা : দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৯ সালের ১৪-২৮ এপ্রিল সৈয়দ নাজাত হোসেনের সম্পাদনায় দুটি সংখ্যা একসাথে প্রকাশের মধ্যদিয়ে যাত্রা শুরু করে সাপ্তাহিক ‘নবাবগঞ্জ বর্তা’। এই পত্রিকা চালু হওয়ার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেশকিছু তরুন সাংবাদিকাতা শুরু করেন যা জেলার সংবাদ পত্রের ইতিহাসে একটি মাইল ফলক। এটি প্রাইম অফসেট প্রিন্টার্স, ৬, ডিসি সুপার মার্কেট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মুদ্রিত ও বালুবাগান থেকে প্রকাশ করা হতো।
চাঁপাই সংবাদ : ১৯৯১ সালে ১০জুন ডি.এম. তালেবুন নবী’র সম্পাদনায় প্রকাশ হয় সাপ্তাহিক ‘চাঁপাই সংবাদ’। এটি ইসলামপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রকাশিত ও কাদেরিয়া প্রিন্টার্স, হুজরাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মুদ্রিত হত।
বীর বার্তা : মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র সম্পাদনায় ১৯৯২ সালের ২৫ অক্টোবর প্রকাশ হয় সাপ্তাহিক ‘বীর বার্তা’। রেজি: নং রাজ : ১১৭। প্রথমে পাক্ষিক পত্রিকা হিসেবে শুরু হলেও পরে এটি সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশনা শরু করে।
সীমান্তের কাগজ : ১৯৯৩ সালের ২৩ জুন জাফরুল আলমের সম্পাদনায় শুরু হয় সাপ্তাহিক ‘সীমান্তের কাগজ’। রেজি: নং রাজ : ১১৫। মাঝখানে বেশ কয়েক বছর বন্ধ থাকায় পত্রিকাটির ডিক্লারেশ বাতিল হয়ে যায়। পরে পুণ: ডিক্লারেশনে ২০১৪ সলে পত্রিকাটি পুনরায় প্রকাশনা শুরু করে এবং বর্তমানে প্রকাশনা অব্যহত রয়েছে।
বিশেষ প্রতিবেদন : ১৯৯৩ সালের ৫ নভেম্বর মিজানুর রহমানের সম্পাদনায় প্রকাশ হয় সাপ্তাহিক ‘বিশেষ প্রতিবেদন’। এটি বেলেপুকুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রকাশিত ও কাদেরিয়া প্রিন্টার্স, হুজরাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মুদ্রিত হত। ৬পৃষ্ঠার এই পত্রিকার দাম ছিলো ১টাকা।
নবাবগঞ্জ সংবাদ : ১৯৯৬ সালের ৮ এপ্রিল আব্দুর রাজ্জাক রাজুর সম্পাদনায় প্রকাশ হয় সপ্তাহিক ‘নবাবগঞ্জ সংবাদ’। রেজি: নং রাজ : ১৪৫। ৪পৃষ্ঠা এই পত্রিকাটির দাম ছিল ১টাকা।
বরেন্দ্র কাগজ : ১৯৯৫ সালের ১জানুয়ারী সুকুমার প্রামানিকের সম্পাদনায় প্রকাশ হয় সাপ্তাহিক ‘বরেন্দ্র কাগজ’। শিবতলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রকাশিত এই পত্রিকাটি ইউনিয়ন প্রেস, বাসুনিয়া পট্টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মুদ্রন হত। ৪পৃষ্ঠার এই পত্রিকাটিরও দাম ছিল ১টাকা।
সাপ্তাহিক মহানন্দা : ১৯৯৬ সালের ২২ আগষ্ট প্রকাশ হয় সাপ্তাহিক মহানন্দা। গোলাম মোস্তফা মন্টু’র সম্পাদনায় মসজিদপাড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রকাশিত ও ইউনিয়ন প্রেস, দাউদপুর রোড, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মুদ্রন করা হত। ৪পৃষ্ঠার এই পত্রিকাটির মুল্য ছিল ১টাকা। রোজি: নং ছিল রাজ : ১৪৩।
নবাবগঞ্জ কণ্ঠস্বর : ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এস.এম.জি ফারুক স্বপনের সম্পাদনায় প্রকাশ হয় সাপ্তাহিক ‘নববাবগঞ্জ কণ্ঠস্বর’।
গৌড় সংবাদ : ১৯৯৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার মাহাতাব উদ্দিনের সম্পাদনায় প্রকাশ হয় সাপ্তাহিক ‘গৌড় সংবাদ’। ডাবল ডিমায় সাইজ ও পরিচ্ছন্ন ছাপার কারনে পত্রিকাটি বেশ পাঠক জনপ্রিয়তা পায়। চকঘোড়াপাখিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম অফসেট প্রিন্টার্স, ট্রাকষ্ট্যান্ড, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মুদ্রন করা হত। ৪পৃষ্ঠার এই পত্রিকাটির মুল্য ছিল ২টাকা। রেজি নং ৪৯৪।
দৈনিক নবাব : ১৯৯৮ সালের ২১ ফেব্রæয়ারী আমিরুল মোমেনিনের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রথম দৈনিক পত্রিকা ‘দৈনিক নবাব’। সম্পাদনায় আমিরুল মোমেনিনের নাম থাকলেও পত্রিকাটি প্রধান সম্পাদক ছিলেন সৈদয় নাজাত হোসেন যিনি সাপ্তাহিক ‘নবাবগঞ্জ বার্তার সম্পাদক ছিলেন। নবাবগঞ্জ বার্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় পত্রিকাটি প্রকাশ হয়। প্রথমে ডাবল ডিমায় কাগজে ছাপা এই পত্রিকাটির দাম ৩টাকা থাকলেও পরে এটি ট্যাবলয়েড আকারে ছাপানো হত এবং এটির দাম রাখা হয় ২টাকা। রেজি নং ছিল রাজ : ১৬৯। পত্রিকা প্রায় ১০বছর চালু ছিলো।
সাপ্তাহিক সোনামসজিদ : সাপ্তাহিক নবাবগঞ্জ বার্তার অন্যতম সাংবাদিক জোনাব আলী’র সম্পাদনায় ২০০০ সালের ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত হয় ‘সাপ্তাহিক সোনামসজিদ’। ট্যাবলয়েড এই পত্রিকাটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকা।
চাঁপাই দৃষ্টি : ২০১৩ সালের ১মে প্রকাশ পায় দৈনিক ‘চাঁপাই দৃষ্টি’। এমরান ফারুক মাসুমের সম্পাদনায় প্রকাশিত ২টাকা দামের ট্যাবলয়েড এই পত্রিকাটি দাউদপুর রোড, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রকাশিত এবং রুসা অফসেট প্রিন্টিং প্রেস, মসজিদপাড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মুদ্রিত। পরে ২০১৬ সালের ১৬মে থেকে ডবল ডিমায় সাইজে ছাপানো শুরু হলে এটির দাম রাখা হয় ৩টাকা। পত্রিকাটির রেজি: নং রাজ : ৩৩৬।
সাপ্তাহিক চাঁপাই প্রতিদিন : ২০১৩ সালের ১মে চাঁপাই দৃষ্টির সাথেই আরেকটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ পায় যার নাম ছিলো ‘চাঁপাই প্রতিদিন’। রফিকুল আলমের সম্পাদনায় প্রকাশিত পত্রিকাটি ১৫/১৬ সংখ্যা ছাপার বন্ধ হয়ে যায়।
চাঁপাই দর্পণ : ২০১৪ সালের ১৪এপ্রিল আশারাফুল ইসলাম রঞ্জু’র সম্পাদনায় প্রকাশ হয় দৈনিক ‘চাঁপাই দর্পণ’। রুসা অফসেট প্রিন্টার্স, মসজিদপাড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মুদ্রিত এই পত্রিকাটি প্রকাশ হয় মোহাম্মদপুর, মহারাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। রেজি নং রাজ : ৩৫২।
চাঁপাই চিত্র : ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আরেকটি দৈনিক পত্রিকা বাজারে আসে যার ‘চাঁপাই চিত্র’। কামাল উদ্দীনের সম্পাদনায় পত্রিকাটি করনেশন রোড, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রকাশিত ও সততা অফসেট প্রিন্টিং প্রেস থেকে মুদ্রিত। চার পৃষ্ঠার পত্রিকাটির মুল্য ৩টাকা। রেজি নং রাজ : ৩৫৯।
গৌাড় বাংলা : ২০১৫ সালের ১লা ফেব্রæয়ারী প্রকাশ পায় দৈনিক ‘গৌড় বাংলা’। হাসিব হোসেনের সম্পাদনায় পত্রিকাটি বেলেপুকুর, অক্ট্রয় মোড়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রকাশিত এবং সততা অফসেট প্রিন্টিং প্রেস, নিমতলা মোড়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মুদ্রিত।
জনকল্যাণ সংবাদ : ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর প্রকাশ হয় সাপ্তাহিক ‘জনকল্যাণ সংবাদ’। রবিউল করিমের সম্পাদনায় জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর থেকে প্রকাশিত ৮পৃষ্ঠার টবলয়েড এই পত্রিকাটির দাম ৩টাকা।
বিভিন্ন সময় জেলায় প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর মেধ্য বর্তমানে চারটি দৈনিক পত্রিকা ‘চাঁপাই দৃষ্টি’, ‘চাঁপাই দর্পণ’, ‘চাঁপাই চিত্র’ ও ‘গৌড় বাংলা’ এবং তিনটি সাপ্তাহিক ‘সাপ্তাহিক সোনামসজিদ’, ‘সীমান্তের কাগজ’ ও ‘জনকল্যাণ সংবাদ’ নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে।
অনলাইন সংবাদপত্র :
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকম : চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রথম অনলাইন পত্রিকা চালু হয় ২০১১ সালের ২৬মার্চ। শহীদুল হুদা অলক www.chapainawabganjnews.com নামের অনলাইনটি সম্পাদন করেন।
কানসাট নিউজটুয়েন্টিফোর ডটকম : ২০১৩ সালের ১জুন থেকে চালু হয় kansatnews24.com এটি কানসাটের স্থানীয় সাংবাদিক ইমরান আলী সম্পাদনা করেন।
চাঁপাইবার্তা ডটকম : ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর সাংবাদিক জোবদুল হক সম্পাদনায় www.chapaibarta.com নামের আরো একটি অনলাইন পত্রিকা চালু হয়।
এছাড়াও দৈনিক ‘চাঁপাই দর্পণ’ www.chapaidarpon.com ও ‘গৌড় বাংলা’ www.gourbangla.com এই পত্রিকা দুটির অনলাইন সংস্করণ রয়েছে।
রেডিও : ‘জীবনের কথা জীবনের সুর’ এই শ্লোগান নিয়ে ২০১২ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাংবাদিকতায় যোগ হয় নতুন মাধ্যম কমিউনিটি রেডিও ‘রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএম’। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জেলার অন্যতম নদী মহানন্দার’র নামে এর নামকরণ করা হয়। কমিউনিটি রেডিও হলেও জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই রেডিওটির খবরসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ফলে জেলার সাংবাদিকতায় সূচিত হয় এক নতুন ধারা। ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স পাওয়ার পর স্টেশন নির্মান, ট্রান্সমিশন টাওয়ার তৈরিসহ সম্প্রচার প্রস্তুতি শেষ হয় ২০১২ সালের ১৪ জানুয়ারী। পরে ২০১২ সালের ১ ফেব্রæয়ারী তৎকালিন রেলপথমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্বোধন করেন। এটি সম্প্রচার হয় এফএম ৯৮.৮ মেগাহাৎর্সে।
সংবাদপত্র একটি সমাজের দর্পণ আর সাংবাদিকরা সংবাদপত্রের প্রাণ। সংবাদপত্রের মধ্যমেই পরিচ্ছন্নভাবে একটি সমাজের চিত্র ফুটে উঠে। জেলার সাংবাদিকতার ইতিহাস খুব বেশি পুরোনো না হলেও একেবারে নতুনও নয়। ১৯৫০ সাল থেকে শুরু হওয়া এই মিছিলে অনেক মুখ এসেছে আবার অনেকে চলেও গেছেন। তবে এই মিছিলে যোগদানকারীদের তালিকা যেমন ক্রমেই লম্বা হচ্ছে তেমনি বড় হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাংবাদিকতার পরিসরও।
তথ্য সূত্র :
০১। আবুল কাশেম শেখ নূর মোহাম্মদ ; নবাবগঞ্জ পরিচিতি। জুন, ২০০৭
০২। মুহম্মদ এলতাসউদ্দিন ; চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিচিতি ও লোকসংস্কৃতি। অক্টোবর, ২০১২
০৩। ড. মাজহারুল ইসলাম তরু ; জেলা নবাবগঞ্জের ইতিকথা
০৪। জুলফিকার হায়দার ; বাংলাদেশের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা। ফেব্রæয়ারী, ২০১৪
০৫। কাজী নাসিরউদ্দিন বাবুল ; সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা। ফেব্রæয়ারী, ২০১৩
০৬। চাঁপাই চিত্র ; ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
০৭। গঠনতন্ত্র ; চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেস ক্লাব। দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৯৯৬
০৮। নবাবগঞ্জ বর্তা ; ১ম বর্ষ, ১-২ সংখ্যা, ১৪-২৮ এপ্রিল ১৯৮৯
০৯। alokito-chapainawabganj.com
১০। সাক্ষাতকার ; ডি.এম.তলেবুন নবী, ইসলামপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ১৯ মে ২০১৭
১১। সাক্ষাতকার ; মনিম উদ দৌলা চৌধুরী, স্বর্ণকার পট্টি, ঝিলিম রোড, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ২৭মে ২০১৭
১২। সাক্ষাতকার ; মোহিত কুমার দাঁ, ইসলামপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ২৭ মে ২০১৭
১৩। সাক্ষাতকার ; গোলাম মোস্তফা মন্টু, মসজিদপাড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ৩০ মে ২০১৭
১৫। সাক্ষাতকার ; শহীদুল হুদা অলক, পোল্লাডাঙ্গা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ৩১ মে ২০১৭
কৈফিয়ত : লেখাটি ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ‘চাঁপাই চিত্র’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিলো। যার দুএকটি যায়গায় সামান্য সংশোধন করা হয়েছে।