প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পাচ্ছে ভর্তির অনুমতি

মেহেদি হাসান

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি সেমিস্টারের মূল্যায়ন ‘স্থগিত’ (পেন্ডিং) রেখে পরবর্তী সেমিস্টারে ভর্তির অনুমতি দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ায় জটিলতা, ব্যবহারিক পরীক্ষা নিতে না পারা, সব শিক্ষার্থীর অনলাইন অ্যাকসেস না থাকা, সবাইকে অনলাইনে না পাওয়ার শঙ্কা এবং বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার সক্ষমতা না থাকায় এ চিন্তা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেবল শ্রেণিকাজ আর ভর্তি কার্যক্রম অনলাইনে চালানোর অনুমতি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানায়।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘হ্যাঁ, এ ধরনের বিশেষ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সেশন শুরু করতে দেয়ার অনুমতি দেয়া যেতে পারে। আমরা অটো-পাস দিতে চাই না। এক্ষেত্রে সেশনের বাকি কাজ পেন্ডিং থাকতে পারে। পরবর্তী সেমিস্টারের লেখাপড়া এখন অনলাইনে চলবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগের সেমিস্টারের মূল্যায়ন কাজটি করা যেতে পারে।’

ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি ৯৬টি বিশ্ববিদ্যালয় এখন শিক্ষা কার্যক্রমে আছে। এর ৪০টিরই নেই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সামর্থ্য। বাকিগুলোর (৫৬টি) বেশির ভাগই আংশিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকটির অনলাইনে সম্পূর্ণ কার্যক্রম চালানোর সক্ষমতা আছে। স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে পরিচালিত ইউজিসির সর্বশেষ এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সামনে রেখে সংস্থাটি ওই সমীক্ষা চালিয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমিতির মাধ্যমে অনলাইনে কার্যক্রম চালানোর ব্যাপারে প্রায় এক মাস ধরে চাপ দিয়ে আসছে। সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বিষয়টি উত্থাপন করেন। তখন তাৎক্ষণিকভাবে ভর্তি ও শ্রেণিকাজ অনলাইনে চালানোর ব্যাপারে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা সম্মত হন। পরীক্ষার ব্যাপারে চলতি সপ্তাহে লিখিত নির্দেশনা জারির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ সদস্যই অনলাইনে পরীক্ষার অনুমতি দেয়ার পক্ষে নন। কেননা অনলাইনে নেয়া পরীক্ষায় কার পরিবর্তে কে অংশ নেয় কিংবা কার অ্যাসাইনমেন্ট কে লিখে ইত্যাদি নিশ্চিত করা খুবই দুুুরূহ। এ ধরনের পরীক্ষার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রাজুয়েটের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

ইউজিসি চেয়ারম্যান যুগান্তরকে বলেন, অনলাইনে পরীক্ষা বা অ্যাসাইনমেন্ট নেয়া জটিল। তবে ভাইভা নেয়া অপেক্ষাকৃত সহজ। এছাড়া শিক্ষার্থী মূল্যায়নে ছুটির আগে হয়ে যাওয়া ক্লাস টেস্ট, ইনকোর্স-টিউটোরিয়াল, কুইজ বা অন্য ধরনের মূল্যায়নকে আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। সব মিলে চলতি সেমিস্টারে শিক্ষার্থীদের সেশন ধরে রাখার জন্য কী কৌশল নির্ধারণ করা হবে সেটাই এই মুহূর্তে তৈরির কাজ চলছে। আমরা চিন্তা করছি, কোনো সিদ্ধান্ত আমরা দেব না, বিকল্পগুলো দেব। তারা সেটার মধ্য থেকে বেছে নিয়ে আমাদের জানাবে। আমরা সেটা পর্যবেক্ষণ করব।

বৈশ্বিক মহামারীর কারণে সব দেশেই বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, সাধারণ ছুটি শুরুর আগে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গড়ে ৭০ শতাংশ ক্লাস ও মূল্যায়ন হয়ে গেছে। বাকি ৩০ শতাংশ সঠিকভাবে মূল্যায়নের পথ বের করার চেষ্টা করছি আমরা। যেহেতু একটি সেমিস্টারের ৩০ শতাংশের ব্যাপার; তাই সনদের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ নেই। এখানে ‘অটো-পাস’ দেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া যে অংশের মূল্যায়ন এখন অনলাইনে করা হবে সেটিতে নম্বর দেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর আগের রেকর্ড নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয় বিবেচনা করবে।

ইউজিসির সদস্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্লাস কার্যক্রমের সম্পূরক অনলাইন কার্যক্রম ভাবাটা ভুল হবে। কেননা সব শিক্ষার্থীর এই সুবিধা আছে কিনা আমরা জানি না। তবে আমরা জানি, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সক্ষমতা নেই। তবু জরুরিভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে ও শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মধ্যে রাখতে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের কাছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নেয়ার পরও বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ঠিকমতো দেয়নি। অনেকেই মার্চের বেতন আংশিক দিয়েছে। ঈদ বোনাস দূরের কথা, এপ্রিলের বেতন-ভাতা না দেয়ার ফন্দি আঁটছে। শুধু আয়ের চাকা সচল রাখার স্বার্থেই অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হচ্ছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে; যাতে শিক্ষক-কর্মচারীরা ঠিকমতো বেতন-বোনাস পান।

বিষয়টি স্বীকার করে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম যুগান্তরকে বলেন, অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে অনুমতি দেয়াটা প্রকারান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়ের রাস্তা খুলে দেয়া। কেননা শিক্ষার্থী ভর্তি না হলে তাদের উপার্জন থাকে না। তবে অনলাইনে মূল্যায়ন যাতে যথার্থ হয়, শ্রেণি কার্যক্রম ঠিকমতো করতে হয় এসব দিক বিবেচনায় নিয়েই নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে।

দিল আফরোজা আরও জানান, শিক্ষার্থী মূল্যায়নে আমরা কয়েকটি দিক গুরুত্ব দেব। এর মধ্যে আছে, সাধারণ ছুটির আগে যে পর্যন্ত বা যতটুকু মূল্যায়ন হয়েছে। সেটা ৭০-৭৫ শতাংশ নেয়া যায়। এছাড়া ভাইভা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যায়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কমপক্ষে ৩০ মিনিট ধরে ভাইভা নিতে হবে। সেখানে কুইজ আকারে প্রশ্ন থাকবে। অ্যাসাইন বা বড় প্রশ্নে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যদিও কেউ কেউ সময় বেঁধে দিয়ে ‘ওপেনবুক এক্সাম’র (বই দেখেই পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর লিখবে) পরামর্শও দিচ্ছেন। তবে এরপরও চ্যালেঞ্জ আছে। কেননা যেসব বিভাগের ল্যাবরেটরি পরীক্ষা ও

কাজ আছে সেগুলোর কী হবে? তবে আমাদের ড্রাফট (খসড়া) তৈরি হয়েছে। দেখি কমিশন (চেয়ারম্যান ও সব সদস্য) কী সিদ্ধান্ত নেয়।

কপিরাইট © চাঁপাই নিউজ ডট কম ২০২৪ । সর্বসত্ব সংরক্ষিত।